শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সরকারি স্কুলে ভর্তিতে বাধা বয়সসীমা, চলছে ফাঁকিবাজি

সরকারি স্কুলে ভর্তিতে বাধা বয়সসীমা, চলছে ফাঁকিবাজি

স্বদেশ ডেস্ক:

সরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ন্যূনতম সীমা ছয় বছর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রেও বয়সের এ হিসাব গণ্য করা হবে। একেবারে ছোট্ট শিশুদের ওপর যেন পড়ালেখা মানসিক পীড়ন হয়ে দেখা না দেয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কিন্তু যেসব শিশু কম বয়সে (সরকার নির্ধারিত বয়সের আগে) স্কুলে ভর্তি হয়েছিল এবং পরীক্ষায় ইতোমধ্যে ভালো ফল করে উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ, তাদের অভিভাবকরা পড়েছেন বিপাকে। বয়সের বাঁধায় সন্তানকে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি করাতে পারছেন না, ক্ষেত্রবিশেষে খুবই ভালো ফল করা সত্ত্বেও। এর বাইরেও অনেক অভিভাবক আছেন, যারা সরকার নির্ধারিত বয়সসীমা এড়াতে ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন; প্রয়োজনে শিশুর বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে নতুন করে জন্মনিবন্ধন সনদ বের করে নিচ্ছেন। ফলে সরকারের যে উদ্দেশ্য, তা অনেকটাই ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে স্কুলে ভর্তির নতুন নিয়মের কারণে যেসব শিক্ষার্থী কাক্সিক্ষত শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না, তাদের অভিভাবকরা এক বছর অপেক্ষা করতেও রাজি নন। সন্তানের বয়স কেউ কমিয়ে কেউ বাড়িয়ে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করে নিচ্ছেন তারা। বিষয়টি অনৈতিক, বলছে শিক্ষা প্রশাসন। কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে তার ভর্তি বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্দিষ্ট বয়সের আগে যেন শিশুদের স্কুলে পাঠানো না হয়, তাদের ওপর যেন কোনো প্রকার মানসিক-শারীরিক চাপ না পড়ে, সে জন্য বয়সের বাধ্যকতা রাখা হয়েছে ভর্তির ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য অনলাইনে করা আবেদনপত্রের সঙ্গে জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।

রাজধানীর বেইলি রোডে একটি কম্পিউটারের দোকানের সামনে গতকাল শনিবার সকালে একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে ভিকারুননিসায় ভর্তির জন্য আবেদন করবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তার মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ দিন কম আছে, অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম তারিখ। এ জন্য তিনি নতুন জন্মনিবন্ধন করার জন্য দোকানে এসেছেন। এ কা- যৌক্তিক ও নৈতিক কি? এমন প্রশ্নে ওই অভিভাবক বলেন, ‘১৫ দিন, ১ মাস বয়স কমানো বা বাড়ানোতে আর কি সমস্যা?!’ নইলে আমার মেয়েকে যে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তার কী হবে? ওকে কী বলে বোঝাব?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও এক অভিভাবক জানান, আগে তার সন্তানের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেটি সংশোধনের নাকি সুযোগ নেই। তিনি হাতে লেখা একটি জন্মসনদ সংগ্রহ করেছেন সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে।

ভর্তিতে বয়সের ন্যূনতম সীমার বিধি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসরণে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালার জালে আটকে যাওয়া অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের জন্মনিবন্ধনের বয়স পরিবর্তন করে ভর্তির যে সুযোগ নিচ্ছেন তা অনৈতিক চর্চা, বলেন তিনি। কোনো শিক্ষার্থীর একাধিক জন্মনিবন্ধন সনদ চিহ্নিত হলে তার ভর্তি বাতিল করা হবে, স্পষ্টতই জানান তিনি।

মতিঝিল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলে ৫ বছর বয়সে যদি প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির সব পাঠ কমপ্লিট করে ফেলতে পারে, সেটি কী অন্যায়? আমি ছেলেকে পরের শ্রেণিতে ভর্তি করাব না? সব শিশুর জন্য কী একই নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত? কোনো কোনো শিশু পাঁচ বছর সাড়ে পাঁচ বছরেই বাংলা, ইংরেজি বা গণিতে তার বয়সের চেয়ে বেশি দক্ষ হতে পারে। আবার কোনো কোনো শিশু ছয় বছরেও নিজের নাম লিখতে ভুল করে। এমন দুটি শিশুর জন্য কি একই নিয়ম খাটানো যায়? সরকার এ বিষয়টি ভেবে দেখুক, এটিই আমার দাবি। নয়তো অনৈতিক পথেই হাঁটবেন অনেক অভিভাবক, তাদের ভর্তি কিন্তু রোধ করা যাবে না।

মাউশির এক কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নিজের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে যেসব অভিভাবক এমন অনৈতিক কাজ করছেন, তাদের কাছে সন্তানরা কী শিখবে? একটি নির্দিষ্ট বয়সে শিশুদের স্কুলে পাঠানো উচিত। শিশুদের যত বেশি চাপমুক্ত রাখা যায়, ততই তাদের মেধার বিকাশ ঘটে। এ জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর স্কুলে নেওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। একেবারে কোমলমতি শিশুদের স্কুলে ভর্তি করে পড়ালেখার নামে তাদের মানসিক-শারীরিক চাপ থেকে মুক্তি দিতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা আছে- ‘যাদের জন্ম ১ জানুয়ারি, ২০১৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ এর মধ্যে, তারাই পারবে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে’; ‘প্রার্থীর নিবন্ধনকৃত পূর্ণ নাম এবং সনদপত্র অনুযায়ী পিতামাতার পূর্ণ নাম উল্লেখ করতে হবে’; ‘ভর্তিকৃত ছাত্রী বা তার পিতামাতার নাম/নামের কোনো অংশ পরবর্তী সময়ে কোনোক্রমেই পরিবর্তন করা যাবে না।’ ভিকারুননিসায় ২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে শুরু হয়ে ২৫ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত স্কুলের ওয়েবসাইটে ভর্তির আবেদন করা যাবে।

অন্যদিকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে গত ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হয় gsa.teletalk.com.bd এই ওয়েবাইটের মাধ্যমে। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ৩০ ডিসেম্বর লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মাবলি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ বছর বিদ্যালয় থেকে ভর্তি ফরম বিতরণ করা হচ্ছে না। ঢাকা নগরীর পাশাপাশি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি শুধু টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল থেকে পরিশোধ করা যাবে। এবার আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। শিক্ষার্থীদের কোনো কোটা থাকলে তা আবেদনে যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877